
গয়ার। ছবি: সংগৃহীত
গয়ারের লম্বা গলার সঙ্গে আছে একটি সূচ্যগ্র ঠোঁট। এরা পানিতে ডুবে অথবা ভেসে মাছ শিকার করে থাকে। শিকারকে ঠোঁটে গেঁথে ফেলে পানির উপরে উঠিয়ে আনে। তারপর সেটিকে কয়েকবার শূন্যে নিক্ষেপ করে মুখের মধ্যে প্রথমে মাথাটি নিয়ে গিলে ফেলে অদ্ভুত কিন্তু আকর্ষণীয় একটি পাখি গয়ার, যার আরেক নাম সাপপাখি।
ইংরেজি নাম Oriental Darter অথবা Snakebird. পাখিটির গলা অনেকটা সাপের মতো অস্বাভাবিক লম্বা, সে কারণেই এই নামকরণ।
গয়ার একটি জলজ পাখি, যা উপমাহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এটি একটি দুর্লভ আবাসিক পাখি। পানকৌড়ির সঙ্গে এর বেশ সাদৃশ্য আছে। গয়ারের লম্বা গলার সঙ্গে আছে একটি সূচ্যগ্র ঠোঁট। এরা পানিতে ডুবে অথবা ভেসে মাছ শিকার করে থাকে। শিকারকে ঠোঁটে গেঁথে ফেলে পানির উপরে উঠিয়ে আনে। তারপর সেটিকে কয়েকবার শূন্যে নিক্ষেপ করে মুখের মধ্যে প্রথমে মাথাটি নিয়ে গিলে ফেলে। পুরো শরীর পানিতে ডুবিয়ে শুধু গলা ও মাথা পানির উপর রেখে সাঁতরে চলে তারা।
এদের লম্বা বাঁকানো গলাটি বেশ শক্তিশালী, যা মাছ শিকার করার সময় সাপের ছোবল দেওয়া বা মানুষের বর্শা নিক্ষেপের মতো ভঙ্গিতে ব্যবহার করে থাকে। শরীরের পশম কালো, গলার নিচের দিকে হালকা সাদা, উপরের দিকে হালকা খয়েরি, ঠোঁট হলুদ। সবচেয়ে আকর্ষণীয় এদের কাঁধের গোড়া থেকে পাখার প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রুপালি-খয়েরি পালক। পানির উপর কোনো শুকনো গাছের ডালের উপর বসে রোদে পাখা শুকানোর সময় মনোরম দৃশ্যটি পরিষ্কার দেখা যায়। পা জোড়া হাঁসের পায়ের মতো, যা সাঁতরে চলতে সাহায্য করে থাকে। পাখিটি দৈর্ঘ্যে সর্বোচ্চ ৯৭ সেন্টিমিটার, পাখার বিস্তার ১২৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন এক কেজি ৮০০ গ্রাম।
গয়ারের প্রধান খাদ্য মাছ। তবে পানির পোকা ও ছোট অমেরুদণ্ডী প্রাণীও এরা ভক্ষণ করে থাকে। জলীয় পরিবেশের উপর নির্ভর করে গয়ার সুবিধামতো সময় প্রজননের জন্য বেছে নেয়। পানির উপর ছোট গাছে কাঠি দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ে মিলে তা দিয়ে ২৮-৩০ দিনে ছানা ফোটায়।
এদেশে সাধারণত হাওর, বিল ও বড় জলাশয়ে গয়ার দেখা যায়। ধারণা করা হয় বিভিন্ন কারণে এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই আইইউসিএন পাখিটিকে হুমকির কাছাকাছি মনে করে।